জৈব ও অজৈব পদার্থ দ্বারা গঠিত দেহের সর্বাপেক্ষা সুদৃঢ় কলাকে অস্থি বলে। অস্থির ম্যাটিক্সে ৪০% জৈব পদার্থ এবং ৬০% অজৈব খনিজ লবণ থাকে। জৈব পদার্থ হিসেবে কোলাজেন ও অসিমিউকয়েড (মিউকোপলিস্যাকারাইড) থাকে। অজৈব পদার্থ হিসেবে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড এবং ম্যাগনেসিয়াম ফসফেট থাকে। ম্যাট্রিক্সে ক্যালসিয়াম লবণ থাকে বলে অস্থি শক্ত হয়। এতে ৯৭% ক্যালসিয়াম থাকে। অস্থির আবরণীকে পেরিঅস্টিয়াম বলে। পেরিঅস্টিয়াম সার্পে তন্তু (Sharpey’s fibers) দ্বারা অস্থির সাথে যুক্ত থাকে। অস্থির মেডুলারী গহ্বরের আবরণীকে এন্ডোস্টিয়াম বলে।
অস্থি গঠনের প্রক্রিয়াকে অসিফিকেশন (Ossification) বলে। মানবদেহের সবচেয়ে বড় অস্থি হলো ফিমার এবং সবচেয়ে ছোট অস্থি হলো স্টেপিস। তিন ধরনের অস্থি কোষ থাকে। অস্টিওসাইট, অস্টিওব্লাস্ট ও অস্টিওক্লাস্ট।
অস্থির শ্রেণীবিভাগ (Classification of bone)
অস্থিকে দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১। নিরেট অস্থি বা কর্টিকেল অস্থি (Compact bone)ঃ যেসব অস্থির কোষে ক্যালসিয়াম বেশি ও মজ্জা কম থাকে এবং সুদৃঢ় হয় তাদেরকে নিরেট অস্থি বলে। নিরেট অস্থিতে হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র (Haversian system) থাকে। হ্যাভারসিয়ান তন্ত্রের কেন্দ্রে হ্যাভারসিয়ান নালি থাকে। হ্যাভারসিয়ান নালির চারিদিকে চক্রাকার ল্যামেলি স্তর থাকে। ল্যামেলিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গহŸর ল্যাকুনা থাকে। ল্যাকুনার চারিদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নালিকা ক্যানালিকুলি থাকে। ক্যানালিকুলি দ্বারা ল্যাকুনা গুলো পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। হ্যাভারসিয়ান নালিগুলো আড়াআড়ি নালি দ্বারা পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। এসব আড়াআড়ি নালিকে ভকম্যানস ক্যানাল (Volkmann’s canal) বলে। অস্থির গহ্বরকে মজ্জা গহ্বর বলে। মজ্জা গহ্বর লাল বা হলুদ মজ্জা দ্বারা পূর্ণ থাকে। ফিমার, টিবিয়া-ফিবুলা, হিউমেরাস, রেডিয়াস-আলনা প্রভৃতি নিরেট অস্থি। মানবদেহের মোট ওজনের ৮০% হলো নিরেট অস্থি।
২। স্পঞ্জি অস্থি (Spongy bone)ঃ যেসব অস্থির কোষে ক্যালসিয়াম কম ও মজ্জা বেশি থাকে এবং স্পঞ্জের মতো নরম হয় তাদেরকে স্পঞ্জি অস্থি বলে। এর গাঠনিক ও কার্যিক একককে ট্রাবেকুলা বলে। এতে অসংখ্য কুঠুরী বা শুন্যস্থান থাকে। এরা স্পঞ্জ বা মৌচাকের মতো বলে এদেরকে ক্যানসেলাস বা ট্রাবেকুলার অস্থি বলে। প্রতিটি ট্রাবেকুলা অস্টিওসাইট, ল্যামিলি, ল্যাকুনি ও ক্যানালিকুলি দ্বারা গঠিত। অস্থির পেরিঅস্টিয়াম হতে রক্তনালিকা ট্রাবেকুলায় প্রবেশ করে এবং অস্থি কোষে পুষ্টি সরবরাহ করে। হ্যাভারসিয়ানতন্ত্র থাকে না। স্তন্যপায়ীর করোটিকা, বৃহৎ অস্থির প্রান্তভাগ, চ্যাপ্টা হাড় এবং পাখির সকল অস্থি স্পঞ্জি প্রকৃতির। শিশুদের প্রায় সকল অস্থিই স্পঞ্জি ধরণের। মানবদেহের মোট ওজনের ২০% হলো স্পঞ্জি অস্থি।